প্রতিবেশী এক কিশোরীকে ধান খেতে টেনে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে ধৃত যুবককে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ধৃতকে ওই আদালতে তোলে। বিচারক স্মিতা সাহা অভিযুক্তের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে আগামী ৫ নভেম্বর ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে, আদালত পুলিশকে আগামী ৩০ অক্টোবর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করানোর জন্য ওই কিশোরীকে আদালতে হাজির করানোরও নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারি আইনজীবী দীপ্তেশ ঘোষের দাবি, এ দিন আদালতে ওই কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত ও অভিযুক্তের যৌনক্ষমতার ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছে। আগামী ৫ নভেম্বর ফের শুনানি হবে। অভিযুক্তের দাবি, সে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেনি। তার বাবার উপরে হামলাও চালায়নি। কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে ওই যুবকের দাবি।
পুলিশের দাবি, রায়গঞ্জের দেবীনগর এলাকার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরীর সঙ্গে ওই যুবকের পূর্ব পরিচিতি রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। ওই যুবক দিল্লিতে দিনমজুরির কাজ করে। দুর্গাপুজোর আগে সে দিল্লিতে লিজে একটি হোটেল ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এরপরেই সে রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিসগ্রাম এলাকার বাড়িতে ফেরে। প্রেমের সম্পর্কের কোনও টানাপড়েনকে কেন্দ্র করে যুবকের বিরুদ্ধে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ওই কিশোরীর মায়ের অবশ্য দাবি, ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর মেয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই যুবক খুনের হুমকি দিয়ে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
তাঁর অভিযোগ, গত মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ মেয়ে বাড়িতে একা ছিল। সেই সময় প্রতিবেশী যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে তাঁর মেয়েকে খুনের হুমকি দিয়ে টেনে পাশের একটি ধান খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর অভিযুক্ত যুবক ওই কিশোরীর হাত ও পা বেঁধে ফেলে রেখে পালায়। পরদিন ভোরে মেয়ের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর তার বাবা ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ করেন। সেই সময় অভিযুক্ত যুবক ওই কিশোরীর বাবার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তির হাতে আঘাত লাগে। এরপরেই ওই কিশোরীর মা পুলিশের কাছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন।
বুধবার দুপুরে অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত দেড় বছরে রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শিশু, কিশোরী, তরুণী ও গৃহবধূ মিলিয়ে ন’জনকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সব ক’টি ধর্ষণের মামলা মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১২ জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও তিন অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ দিকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা বাড়তে থাকায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমারের দাবি, প্রতিটি ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। কোনও অভিযুক্ত ফেরার থাকলে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।