31.10.18
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গের লাশ কাটা ঘরে পাশাপাশি পড়ে আছে মা-মেয়ের লাশ।
আজ মঙ্গলবার ডোম ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ আর কাটেনি। বিকেল চারটার আগে পুলিশ লাশ দু’টি এনে মর্গে রেখে গেলেও কোনো কাগজপত্র সঙ্গে আনেনি। কাগজ নিয়ে এলে বুধবার সকালে প্রথমেই মা-মেয়ের লাশ কাটে ভিসেরা নেয়া হবে হবে ময়নাতদন্তের জন্য সংরক্ষণে।
এর আগে দুপুর একটার দিকে খবর পেয়ে নগরের ডবলমুরিং থানার গায়েবি মসজিদ সংলগ্ন মগপুকুরের পশ্চিম পাড়ের আবদুল আলীর তিনতলা ভবনের নিচতলার দুইটি কক্ষ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতদের একজন হোসনে আরা বেগম (৬০) ও অপরজন তার কন্যা পারভিন আক্তার (২২)।
কুমিল্লার মুরাদনগরের ধনপতি গ্রামের মৃত বার মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে সোহেল পাঠানটুলির মগপুকুর পাড়ের আবদুল আলী নামের এক জমিদারের তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে আট মাস ধরে বসবাস করছেন।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ডেলিভারির সময় হওয়ায় গত দু’মাস আগে সোহেলের শাশুড়ি কুমিল্লা থেকে এসে নিয়ে গেছেন। এরপর রান্না সমস্যার কারণে ছেলের খাওয়া দাওয়ার কষ্ট শুনে মা হোসনে আরা বেগম গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে ছেলের কাছে চলে আসেন।
সেই থেকে মা- ছেলে বসবাস ছিলো এ ভাড়া ঘরে। কন্যা পারভীন আকতার সিলেট থেকে স্বামী মতিনকে নিয়ে ভাইয়ের ঘরে উঠার পর পাশের আরেকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে স্বামী মো. মতিনকে থাকতে দেন মা হোসনে আরা বেগম। চট্টগ্রামে আসার পর মতিন কিছুদিন রিকশা চালিয়েছেন।
নগরের আগ্রবাদে একটি বেকারির কাজ করেন সোহেল। রাত জেগে বেকারির কাজ করে প্রতিদিন সকালে ফেরার পথে মার জন্য রুটি-পরটা আর চা নিয়ে আসতেন সোহেল। আজও মায়ের জন্য নাস্তা নিয়ে সকাল নয়টার দিকে বাসায় আসেন সোহেল। প্রথমে মায়ের রুমের দিকে যান। সেখানে রুমের দরজা আলগা অবস্থায় দেখে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেন। আর তখনই দেখতে পান মা বিছানায় শক্ত হয়ে পড়ে আছেন। পাশে বোনের কক্ষের দরজা বাহির থেকে তালা লাগানো। আর এ অবস্থা থেকে সেই একই এলাকায় থাকা মেজ বোনকে ডেকে আনেন।
সোহেলের মেজ বোন রেশমি আক্তার বলেন, ভাইয়ের কাছে খবর শুনে দৌড়ে আসি। ততক্ষণে বাসার সামনে অনেক লোক জমে গেছে। লোকজন জানালা দিয়ে দেখেন সেখানেও বিছানায় একজন মরে আছে। এরপর দরজা খুলে দেখি এ আমার ছোট বোন পারভীন।
রেশমি বলেন, দেড় বছর আগে মতিনের সঙ্গে পারভিনের বিয়ে হয়। মতিনের বাড়িও আমাদের একই জেলা কুমিল্লায়। সিলেটে মতিনের একটি ভাঙাড়ি দোকান ছিল। বিয়ের পর পারভিনকে নিয়ে মতিন সিলেটে চলে যায়। সেখানে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার পর পারভিনের ওপর বিভিন্ন সময় অত্যাচার করত মতিন। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত রমজানে পারভিন মুরাদনগরে বাবার বাড়িতে চলে আসে। ঈদের পর মতিন তাকে আনতে মুরাদনগর এসে মামার (পারভিনের মামার) মধ্যস্থতায় মতিনের সঙ্গে সিলেটে যায়। একমাস আগে মতিন ও পারভিন চট্টগ্রামে দু’জন ভাই সোহেলের বাসায় উঠে।
রেশমির স্বামী সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে এসে মতিন তার শাশুড়ির কাছে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-মারধরের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। আর তখন শাশুড়ি তার বাসার পাশে খালি বাসা ভাড়া করে তাদের রাখেন।
রেশমি জানান, মতিন এখানে আসার পর সবসময় ঝামেলা করত। বৃদ্ধা মা রান্না করতেন, আর তারা এসে খেতেন।
রেশমির স্বামী সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুরেও শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করে মতিন। পরে রাতে পারভীন বাসায় ফেরার পর তার সঙ্গেও ঝগড়া হয়। ওই সময় মা ও মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তখন মা-বোনকে গালিগালাজের প্রতিবাদ করে সোহেল।
সাইফুলের সন্দেহ, রাতে বাসায় মতিন দু’জনকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে যাওয়া সিএমপির ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, গলা টিপে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। দু’জনের গলায় আঙ্গুনের ছাপ ও গলায় দাগ রয়েছে। আর যেহেতু মতিন আত্মগোপনে, তাতে সন্দেহ নেই যে সে হত্যা করেছে।
Labels: খুন
0 comments:
Post a Comment
মূল্যবান মতামতের জন্য আপনাকে ধনবাদ ।